মথুরাপুর দেউল বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার অবস্থিত একটি দেউল বা মঠ। এই প্রত্নতাত্ত্বিক অবকাঠামোটি আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি করা হয়েছিলো বলে ধারণা করা হয়; তবে কারো কারো অনুমান এটি সপ্তদশ শতকের স্থাপনা।

অবস্থান

বাংলাদেশের ঢাকা বিভাগের ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার গাজনা ইউনিয়নের মথুরাপুর গ্রামে মথুরাপুর দেউলটি অবস্থিত। এই দেউলটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের মধুখালী বাজার থেকে মধুখালী-রাজবাড়ী ফিডার সড়কের দেড় কিলোমিটার উত্তরে এবং মধুখালী-বালিয়াকান্দি আঞ্চলিক সড়কে মধুখালী সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে গাজনা ইউনিয়নে সড়কের পশ্চিম দিকে অবস্থিত যার বিপরীত দিক (সড়কের পশ্চিম দিক) দিয়ে বয়ে গেছে চন্দনা নদী।

ইতিহাস

কিংবদন্তি রয়েছে যে, মুঘল সম্রাট আকবরের সেনাপতি রাজা মানসিংহ রাজা প্রতাপাদিত্যকে যুদ্ধে পরাজিত করে এটি নির্মাণ করেছিলেন। মানসিংহের সাথে প্রতাপাদিত্যের যুদ্ধ এবং সে যুদ্ধে মানসিংহের জয়লাভ ইতিহাসের বিচারে সত্য নয়। ১৬১২ সালে প্রতাপাদিত্যের সাথে সুবেদার ইসলাম খানের ভাই এনায়েত খানের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে প্রতাপাদিত্য পরাজয় বরণ করলে তাকে দিল্লিতে নেয়া হয়, এ অবস্থায় বোঝা যায় রাজা প্রতাপাদিত্য মন্দিরটি নির্মাণ করেননি। আবার মানসিংহ এতদাঞ্চল ছেড়ে যান ১৬০৬ খ্রিষ্টাব্দে এবং তিনি মারা যান ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে। অতএব দেখা যায়, দুজনের কেউ এই মন্দিরটি নির্মাণ করেননি। তবে ষোড়শ শতকে মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে গভর্নর সংগ্রাম সিংহ দেউলটি বিজয়স্তম্ভ হিসেবে চিহ্নিত করার জন্যই নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে মঠটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন এবং সংরক্ষিত।

বর্ণনা

এই দেউলটি বারোকোন বিশিষ্ট এবং মাটি থেকে প্রায় ২১.২ মিটার উঁচু; যার ভিতর একটি ছোট কক্ষ রয়েছে।

এর গঠন প্রকৃতি অনুসারে একে মন্দির বললে ভূল হবে না ৷ এটি একটি রেখা প্রকৃতির দেউল ৷ ষোড়শ শতাব্দীর স্থাপনা গুলোর মধ্যে মথুরাপুর দেউল সম্ভাবত একমাত্র রেখা প্রকৃতির দেউল ৷ দেউলটি বারো কোণ বিশিষ্ঠ একটি ভবনের মত স্থাপনা ৷ দেউলটিতে দুইটি প্রবেশ পথ আছে, একটি দক্ষিণ মুখী অন্যটি পশ্চিম মুখী ৷

এটি তৎকালীন ভবনগুলোর মধ্যে একমাত্র বারো কোণবিশিষ্ঠ কাঠামো ৷ বারোটি কোণ থাকায় উপর থেকে দেখলে এটিকে তারার মত দেখা যায় ৷ দেউলটির উচ্চতা ৮০ ফুট ৷ স্থাপনাটির মূল গঠন উপাদান চুন-সুরকির মিশ্রণ ৷ দেউলের বাইরের দেয়ালটি লম্বালম্বিভাবে সজ্জিত, যা আলোছায়ার সংমিশ্রণে এক দৃষ্টিনন্দন অনুভূতির সৃষ্টি করে ৷ পুরো স্থাপনা জুরে টেরাকোটার জ্যামিতিক ও বাহারী চিত্রাংকণ রয়েছে ৷ রামায়ন কৃষ্ণলীলার মত হিন্দু পৌরাণিক কাহীনির চিত্র, গায়ক, নৃত্যকলা, পবন পুত্র বীর এবং যুদ্ধচিত্রও এইসদাউলের গায়ে খচিত রয়েছে ৷ প্রতিটি কোনের মাঝখানে কৃত্তিমূখা স্থাপন করা রয়েছে ৷ তবে দেউলটির কোথাও কোন লেখা পাওয়া যায়নি ৷ বাংলার ইতিহাসে এর নির্মাণশৈলী অনন্য বৈশিষ্ঠ বহন করে ৷ এটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি সুরক্ষিত সম্পদ ৷

তথ্য সূত্র

  কোদলামঠ- বাংলাপিডিয়া।

  প্রত্নতত্ত্বঅধিদপ্তর, বাংলাদেশ।

  জাতীয়তথ্যবাতায়ন- ফরিদপুরজেলা।

কিভাবে যাওয়া যায়:

মধুখালী উপজেলা হতে ২ কি.মি. উত্তরে রিকসা,ভ্যান অথবা অটোযোগে যাওয়া যায়।